Sahityapedia
Sign in
Home
Search
Dashboard
Notifications
Settings
4 Dec 2023 · 4 min read

ফুলডুংরি পাহাড় ভ্রমণ

ফুলডুংরি পাহাড়। যারা ঘাটশিলায় ভ্রমণ করতে আসেন তারা এই পাহাড়ের মাথায় চড়েন। পাহাড়ের মাথায় চড়ার জন্য নিচ থেকে একটি পাথুরে পথ ক্রমশ উপরে উঠে গেছে। নুড়ি পাথরের পথ। পথের দুই পাশে ঘন গভীর জঙ্গল। মূলত শাল অর্জুন শিশু প্রভৃতি গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এগুলিই তো মালভূমি অঞ্চলের গাছ।পাহাড়টি ছোটো পাহাড়। যারা নির্জনতা ভালোবাসেন তাদের জন্য এই পাহাড় আদর্শ। বা যারা চুপচাপ থাকতে ভালোবাসেন তাদের জন্যও এই পাহাড় আদর্শ।

কিন্তু মানুষ এই পাহাড়ে ভ্রমণ করতে আসে কেন? তার প্রধান কারণ হলো স্বনামধন্য লেখক শ্রীবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই পাহাড়ের মাথায় বসে অনেক সাহিত্য রচনা করেছেন। পাহাড়ের মাথায় যে জায়গায় বসে তিনি সাহিত্য রচনা করতেন সেই স্থানটি দেখতে সবাই যায়। এগুলির বর্ণনা আমি পরে পরে সব বলব।

ঘাটশিলা ভ্রমণের সবথেকে ভালো সময় হলো শীতকাল। এইসময় এখানে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন।এর প্রধান কারণ হলো এইসময় ঘাটশীলার পাহাড় জঙ্গল নদী ঝর্ণা হ্রদ আরও অপরূপ সুন্দর দেখায়। কিন্তু কিছু কিছু ছোট ছোট ঝর্ণা শুকিয়ে যায়।জল থাকে না। তাই অনেকে বর্ষাকালেও ভ্রমণ করতে আসেন।এই সময় হ্রদ নদী যেখানে পাহাড়ের গায়ে যত ঝর্ণা আছে সব জলে ভরে যায়। কিন্তু বর্ষাকালে পাহাড়ের মাথায় চড়া একটু অসুবিধাজনক হয়।কারণ পাথুরে পথের উপর দিয়ে গেলে অনেক সময় পা পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

যাইহোক আমরা তিনজন গেছিলাম ঘাটশীলা দু’হাজার তেইশ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে।আমি আমার বাবা আর মা।আমার বয়স তখন তেইশ বছর।
ফুলডুংরী পাহাড়ের মাথায় উঠতে শুরু করলাম। ভালোই লাগছিল। শীতকাল ছিল তাই আকাশ খুব পরিষ্কার ছিল। নীল আকাশ আর ছোট বড়ো সাদা মেঘ ভাসছিল। পাহাড়ে ওঠার সময় দেখছিলাম বড় বড় গাছপালার পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো লুকোচুরি খেলে মাটিতে পড়ছে। পাহাড়ে চড়তে এলে এটা একটা বড় অভিজ্ঞতা হয়। আর আগেই বলেছি যেহেতু শীতকালে গেছিলাম তাই আলোর বেশি তাপ নেই। অর্থাৎ হালকা সূর্যের আলো। যা গায়ে লাগাতেও খুব ভালো লাগে।

আমরা একটি অটো ভাড়া করেছিলাম ঘাটশীলার সাইডসিনের জন্য। ঘাটশীলায় অটোর চলটাই বেশি। তবে অনেকে বিভিন্ন চারচাকা গাড়ি ভাড়া করেও আসে। সেদিনের মতো আমরাই প্রথম এসেছিলাম সে পাহাড়ে। পরে আরো মানুষের ভিড় জমে।
এবার বলি, আমরা যে সময়ে ঘাটশিলা গেছিলাম তখন ঘাটশিলা অনেক উন্নত। চারিদিকে বড়ো বড়ো রাস্তা। বড় বড় গাড়ি চলছে। হোটেল দোকানপাট ভর্তি এদিকে ওদিকে। কিন্তু বিভূতিভূষণের সময় ঘাটশিলা এত উন্নত ছিল না। এত মানুষের বসতিও ছিল না। তিনি এই পাহাড়ের শোভায় মুগ্ধ হয়ে রেললাইন পার করে এই পাহাড়ে এসে এর মাথায় বসে সাহিত্য রচনা করতেন।

যারা পাহাড়ে চড়তে ভালোবাসেন বা যারা জঙ্গল ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন তারা একটা কথা খুব ভালোভাবে জানবেন যে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন নাম না জানা গাছের ফুল বা ফলের গন্ধ নাকে এসে লাগে। মূলত যেগুলিকে এককথায় বলি আমরা বুনোফুল বা বুনোফলের গন্ধ। এই গন্ধের একটা আলাদা মাধুর্য আছে। তো আমরাও পাহাড়ের ওঠার সময় এমন গন্ধ পাচ্ছিলাম।
পাথরের পথ দিয়ে উঠতে উঠতে একটা জায়গায় এসে পৌঁছালাম। সেখান থেকে চারপাশের পরিবেশ টা খুব সুন্দর দেখতে লাগছিল।সেখান থেকে পথ দুটো ভাগ হয় বৃত্তাকারে পাহাড়ের মাথায় উঠেছে। আমরা ডানদিকের পথটাই ধরলাম। আরও কিছুদূর যাওয়ার পরে দেখলাম উপরে একটি ছোটো পাঁচিল ঘেরা জায়গা। বুঝতে বাকি রইল না ঐ উপরের অংশটাই পাহাড়ের মাথা। তো মাথায় উঠলাম একটা ছোটো গেট পেড়িয়ে। গেটটা খোলাই ছিল।এর অপরদিকেও একটা এমনই গেট ছিল।

উপরে এসে দেখলাম চারপাশটা বেশ বড় জায়গা। আর মাঝখানে রয়েছে একটা মাঝারি উচ্চতার গাছ আর তার নিচে একটি মাচা করা আছে। গাছটার নাম কি সেটা আমি বলতে পারব না। বুঝলাম ওই মাচার নিচে বসেই বিভূতিভূষণ সাহিত্য রচনা করতেন।

এখন যেমন পাহাড়ে ওঠার জন্য পাথুরে পথ আছে বিভূতিভূষণের সময় এমন পথও ছিল না। বললাম না সেসব বহু পুরোনো দিনের কথা। তবে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ চলতে চলতে পথ সৃষ্টি হয়ে গেছে। পাহাড়ের মাথায় উঠে চারপাশটা ঘুরে দেখছিলাম। আকাশ পরিষ্কার। চারিদিকে রোদের আলো। খুব ভালো লাগছিল।এই পাহাড়ের মাথা থেকে ঘাটশীলা শহরকে দেখা যায়।তবে এত ঘন গভীর জঙ্গল যে ভালোভাবে দেখা যায় না।আর একনাগাড়ে আমাদের কানে আসছিল দূরের রাস্তা দিয়ে বাস লরি প্রভৃতি যানবাহনের চলার শব্দ। বুঝলাম এই জায়গা এককালে খুবই শান্ত ছিল। শান্ত বলতে বোঝাচ্ছি চারপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই এমন। কিন্তু বর্তমানে তেমন শান্ত আমার লাগে নি।

আমরা মোবাইল দিয়ে অনেক ছবি তুললাম।ভিডিও করলাম কিছু। বিভূতিভূষণ যেস্থানে বসে থাকতেন সেই স্থানে বসে কিছু ছবি তুললাম। এগুলোই সব স্মৃতি হয়ে থাকবে। মনে মনে ভাবছিলাম এই স্থানে কত মানুষ এসেছে।কত ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
আমরা তাও আধঘন্টার বেশি সময় ধরে ছিলাম। এরই মধ্যে আরও বেশ কিছু মানুষ সেখানে আসে।
পাহাড়ের চারপাশে যেমন জঙ্গল আছে উপরে কিন্তু তেমন জঙ্গল নেই। ফাঁকা ফাঁকা। তবে দেখলাম ঝাড়খন্ড সরকার অনেক ছোট ছোট গাছ বসিয়ে রেখেছে। ওগুলোই বড়ো হবে একদিন।

পাঁচিলের একটা ধারে গিয়ে নিচের দিকে তাকালাম। দেখলাম খাদ কিন্তু বেশি গভীর নয়।আর নিচ থেকে বড়ো বড়ো গাছ লম্বা হয় দাঁড়িয়ে আছে।এবার নামার পালা।আগেই বলেছিলাম উপরে আসার দুটো পথ আছে।একটি পথ দিয়ে এসেছিলাম এবার তার অন্য পথ দিয়ে নামতে থাকলাম। একটি পথে একটি গেট আছে যেটা পেড়িয়ে এসেছিলাম। অন্য পথে অন্য একটি গেট আছে। তো আমরা সেই অন্য গেট দিয়ে নামতে থাকলাম।গেটগুলো সবসময় খোলাই থাকে।
ভালো করে চারপাশটা মন ভরে দেখে নিচ্ছিলাম। আবার কবে আসবো কে জানে? আমাদের পরেও আরও কত মানুষ আসবে।
বিভূতিভূষণের স্মৃতিবিজরিত এই পাহাড়কে বিদায় জানিয়ে আমরা নিচে নেমে এলাম।

— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
৪/১২/২০২৩

385 Views

You may also like these posts

"लागैं बसंत के प्रीति पिया"
राकेश चौरसिया
❤️ DR ARUN KUMAR SHASTRI ❤️
❤️ DR ARUN KUMAR SHASTRI ❤️
DR ARUN KUMAR SHASTRI
*चुनावी कुंडलिया*
*चुनावी कुंडलिया*
Ravi Prakash
हमसे ये ना पूछो कितनो से दिल लगाया है,
हमसे ये ना पूछो कितनो से दिल लगाया है,
Ravi Betulwala
खिड़कियाँ -- कुछ खुलीं हैं अब भी - कुछ बरसों से बंद हैं
खिड़कियाँ -- कुछ खुलीं हैं अब भी - कुछ बरसों से बंद हैं
Atul "Krishn"
उनकी ख्यालों की बारिश का भी,
उनकी ख्यालों की बारिश का भी,
manjula chauhan
मची हुई संसार में,न्यू ईयर की धूम
मची हुई संसार में,न्यू ईयर की धूम
सुरेश कुमार चतुर्वेदी
वक्त का क्या है
वक्त का क्या है
Surinder blackpen
रणचंडी बन जाओ तुम
रणचंडी बन जाओ तुम
विनोद वर्मा ‘दुर्गेश’
कर डाली हड़ताल
कर डाली हड़ताल
RAMESH SHARMA
सबसे सुगम हिन्दी
सबसे सुगम हिन्दी
Sarla Sarla Singh "Snigdha "
जो हुआ, वह अच्छा ही हुआ
जो हुआ, वह अच्छा ही हुआ
gurudeenverma198
अपनी सोच
अपनी सोच
Ravi Maurya
हार जीत
हार जीत
Sudhir srivastava
महत्वपूर्ण यह नहीं कि अक्सर लोगों को कहते सुना है कि रावण वि
महत्वपूर्ण यह नहीं कि अक्सर लोगों को कहते सुना है कि रावण वि
Jogendar singh
कई दिन, कई महीने, कई साल गुजर जाते हैं।
कई दिन, कई महीने, कई साल गुजर जाते हैं।
जय लगन कुमार हैप्पी
सद्गुरु
सद्गुरु
अवध किशोर 'अवधू'
अब देश को
अब देश को
*प्रणय*
प्रोटोकॉल
प्रोटोकॉल
Dr. Pradeep Kumar Sharma
रोटियाँ
रोटियाँ
Rekha Rajput
3382⚘ *पूर्णिका* ⚘
3382⚘ *पूर्णिका* ⚘
Dr.Khedu Bharti
इतने  बीमार  हम  नहीं  होते ,
इतने बीमार हम नहीं होते ,
Dr fauzia Naseem shad
As I grow up I realized that life will test you so many time
As I grow up I realized that life will test you so many time
पूर्वार्थ
जिन्हें देखना कभी जुनून था,
जिन्हें देखना कभी जुनून था,
हिमांशु Kulshrestha
सृजन तेरी कवितायें
सृजन तेरी कवितायें
Satish Srijan
नहीं है प्रेम जीवन में
नहीं है प्रेम जीवन में
आनंद प्रवीण
"चुनाव सुधारों के जनक"
Dr. Kishan tandon kranti
इत्तिफ़ाक़न मिला नहीं होता।
इत्तिफ़ाक़न मिला नहीं होता।
सत्य कुमार प्रेमी
दोहे- अनुराग
दोहे- अनुराग
राजीव नामदेव 'राना लिधौरी'
विश्वास कर ले
विश्वास कर ले
संतोष बरमैया जय
Loading...