আমার প্রথম কবিতার গল্প!!
আমার প্রথম কবিতার গল্প!!
(১৯৯৩ সালের দুর্গা পূজোর সময় পরিবেশিত)
নয়ডা কালী বাড়ি আমার বাড়ি আর অফিসের মাঝের পথে অবস্থিত।
একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে আমি দেখি কালী মন্দিরের অফিস ঘরে কালচারাল কমিটির সদস্যদের মধ্যে কোনো গভীর আলোচনা চলছে। সেই দেখে আমি উত্তেজিত হয়ে তাদের সাথে যোগ দিলাম।
তাদের মধ্যে একজন বললো ঘোষ দা বাড়ি গিয়ে একটু আরাম করে আসুন। কারন যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে তার সাথে আপনার কোনো যোগ নেই। আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম বিষয়টি বলো না! তখন তারা বললো যে পঞ্চমীর রাতে আবৃত্তি হবে। প্রত্যেক বয়স বিভাগের প্রতিযোগীদের নাম এসে গেছে, কিন্তু সিনিয়রদের একটা নামও এখন পর্যন্ত আসে নি।
আমি বললাম, তো!
ওরা বললো তো মানে? দাদা, আমাদের প্রোগ্রাম সেট করতে হবে। আর দেরিতে এলে ভীষণ অসুবিধে হবে।
তখন আমি বললাম, আমার নাম টা লিখে নে। সবাই একগাল হেসে বললো, তুমি আবৃত্তি করবে? আবৃত্তি হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি বা ইঙরেজি তে নয়, বাংলা তে।
আমি বললাম হ্যাঁ, যেটা সোজা করে বলি সেটা গদ্য, আর যেটা সুর-লয় করে বলবো সেটা পদ্য হয়ে যাবে।
ওরা বললো, তুমি বাড়ি যাবে!
আমি বাড়ি ফিরে এলাম।
অপেক্ষার দিন শেষ হলো। দুর্গা পূজোর পঞ্চমীর রাত। পূজো মন্ডপে দর্শকদের ভীড়, একে একে প্রত্যেক বয়স বিভাগের প্রতিযোগীদের নাম ডাকা হলো। তারপর এলো আমার নাম। তখন আমার ডিউটি ছিল সিকিউরিটির। একজন সদস্য এসে বললেন, ঘোষ দা আপনার নাম ডাকা হয়েছে।
কি হলো?
কিছুই হয় নি। আপনি প্রতিযোগিতায় আপনার নাম যোগ করার জোর দিয়েছিলেন, তাই এটা যোগ করা হয়েছে।
সে কি? তোরা কি আমায় জানিয়েছিলি? আমার কোনো কবিতা নেই।
সে মুচকি হেসে বললো, ঘোষ দা আপনার মন্তব্য ছিল, “আমি যা সোজা করে বলি সেটা গদ্য আর যা ছন্দে বলবো তা কবিতা হয়ে যাবে। এবার যান আপনার ছড়া বলুন!
আমি মঞ্চের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রথমে দর্শক বৃন্দদের অভিনন্দন জানাই, তারপর বিচারক মন্ডলী কে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম।
তাদের জানালাম, আমার কবিতা কোনো কবির নয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য সব কবিদের নাম জানি কিন্তু তাদের কবিতা পড়ার সুযোগ হয় নি।
তবে যে কবিতা টি আমি পরিবেশন করবো জীবনে যেটুকু উপলব্ধি করেছি, সেটুকু আপনাদের সামনে পরিবেশন করবো।
আওয়াজ এলো, ঘোষ দা এবার আরম্ভ করুন!
আমি জীবনে কখনো কোনো কবিতা আবৃত্তি করিনি, বলা বা লেখা তো কল্পনার বাইরে!
ব্যস, উপস্থিতমতো যা মনে বা হৃদয়ে ছোঁয়া লাগলো, শব্দগুলো নিজে নিজেই বলে দিলাম……
কবিতা শেষ হলো, পুরো মন্ডপের ভীড় নি:শব্দ!
আমি হতভম্ব, স্টেজে দাঁড়িয়ে! কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর জিগ্যেস করলাম, কি রে কি হলো?
আর কি হলো! পুরো দর্শক দাঁড়িয়ে তালির পর তালি দিতে থাকলো।
আজ আবার ২৯ বছর পর আমার সেই কবিতা আপনাদের সামনে পরিবেশন করছি।
আমি আমাদের নয়ডা বেঙ্গলি এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য বৃন্দদের কাছে বাংলা ভাষা শেখার জন্য কৃতজ্ঞ। 🙏
বাংলা টা এখনও ঠিক করে লিখতে পারি না।
*Prefix STORY is Scripted by Mrs. Chhanda Chatterjee & Mr. Pankaj Bose. I am also thankful to them. 🙏
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
জীবন কারোর সোজা নয়,
আঁকা বা বাঁকা নয়,
জীবন কারোর সোজা নয় ,
আঁকা বা বাঁকা নয় ,
**********************
জীবন কারোর সোজা নয়,
আঁকা বা বাঁকা নয়
নিজস্ব মহিমায় সে আসে,
জন্ম , বিবাহ , মৃত্যু
চকিতে চমকিতে,
নিজের প্রবাহে ভাসে
তার মানে নয়, মাঝের সময়, শুন্যতে সে দোলে,
তার মানে নয়, যা পেয়েছি ,
তাই ফেলবো দূরে ঠেলে ৷
নিজের সাথে খেলা ,
নিজ ইচ্ছা অবহেলে
ধাঁধাঁ জাগে বোধ এসে ৷
এতো বড় উপহার ,
নিতে যদি হয়ে ভার,
হেরে গিয়ে কি হবে শেষে !
জীবন কারোর সোজা নয়
আঁকা বা বাঁকা নয় ……
যদি চাও সুখী জীবন,
হেঁসে নিতে হবে,
জীবনের ব্যথা ও ক্রন্দন।
দুঃখ বিলাপ না হলে জীবনে,
পাবে কি সুখের মর্যাদা ?
ওঠো অবহেলা ছাড়ো,
করো জীবন কে আবরণ
সুখী হবে , শান্তি পাবে,
জীবন অলংকরণ ৷
জীবন কারোর সোজা নয়
আঁকা বা বাঁকা নয় ,……..